November 6, 2020 By Easin 0

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড – খরচ, কোথায় থাকবেন, কিভাবে যাবেন

Saint Martin Tour Guide

Saint Martin

সমুদ্রের মাঝখানে প্রাকৃতিক সৌন্দয্য এবং নারিকেলের প্রাচুয্যতায় ভরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ (st. martin’s island)।  কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমারের উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ।

এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একমাত্র প্রবল দ্বীপ। পর্যটন এরিয়া হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। এই দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয় কারন এখানে প্রচুর পরিমানে নারিকেল পাওয়া যায়।

অপূর্ব সৌন্দর্য্য, সারিবদ্ধ নারিকেলের গাছ, সাগরের নীল পানি সবকিছুতেই এক অপরুপ ভুমিকার সৃষ্টি করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ যা ভ্রমন পিপাসুদের জন্য মনমুগ্ধকর। পর্যটন মৌাসুমে এখানে প্রতিদিন ৫ টি লঞ্চ বাংলাদেশ ভূখন্ড/টেকনাফ হতে আসা যাওয়া করে। এই দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা আছে যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় ও ভাটার সময় জেগে উঠে। দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল তবে কিছু কিছু যায়গায় বালিয়াড়িও দেখা যায়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রধান গঠন উপাদান হলো চুনাপাথন। দ্বীপটিতে কিছু কিছু যায়গায় কৃষি উৎপাদনও হয়ে থাকে তবে খুবই কম। তবে দ্বীপের দক্ষিন দিকে প্রচুর পরিমানে কেওড়ার ঝোপও রয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইতিহাস

সর্বমোট প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ঠ দ্বীপটি কবে প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিলো তা জানা যায়নি। তবে প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরন করেছিলেন জিঞ্জিরা দ্বীপ নামে। এই বনিকরা চট্রগ্রাম থেকে পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াতের সময় এই দ্বীপে বিশ্রাম নিতেন। তাই মানুষ দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা দ্বীপ নামেই চিনতো।

১৮৯০ সালের দিকে বাঙ্গালী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এই দ্বীপে এসে বসতি স্থাপন করেন। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় প্রথম অধিবাসী হিসেবে বসতি স্থাপন করেছিলো মোট ১৩ টি পরিবার। যারা সবাই মৎস্যজীবি বা জেলে ছিলো।

কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিণত হয়।  সেখানে তারা প্রচুর পরিমানে নাকিকেল গাছ রোপন করে। তাই একটা সময় নারিকেলে জিঞ্জিরা নামেও অবিহিত করা হয় দ্বীপটিকে। ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসেবে নিয়ে নেয়।

এরপর তারা এই দ্বীপের নাম পরিবর্তন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নামকরন করে। তারপর থেকেই মানুষ এটিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নামেই চিনে।

কিভাবে যাবেন সেন্টমার্টিন দ্বীপে, খরচ কতো?

ঢাকা থেকে আপনাকে সর্বপ্রথম চট্রগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ যেতে হবে। ঢাকা থেকে টেকনাফ যাওয়ার জন্য আব্দুল্লাহপুর, কমলাপুর, আরামবাগ ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড এ টেকনাফের বাস পাবেন। শ্যামলি পরিবহন, গ্রীন লাইন, এস আলম, ইগল, মর্ডান লাইন, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ আরো কিছু টেকনাফের বাস পাবেন।

বাসের ক্লাস অনুযায়ী ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পযর্ন্ত ভাড়া পড়বে। নন এসি বাসে ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন। আর এসি বাসে ২ হাজার টাকা পযর্ন্ত লাগবে। ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লাগবে পৌছতে। তাই সন্ধ্যা শুরু হওয়ার আগেই রওনা হওয়া ভালো।

সন্ধ্যা ৬ টা বা ৭ টার দিকে রওনা দিলে পরবর্তী দিন সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে টেকনাফে পৌছে যাবেন। টেকনাফ থেকে আপনাকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে হবে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার।

টেকনাফের জাহাজ ঘাটে আপনাকে জাহাজের আপ-ডাউন টিকেট কাটতে হবে। আপ-ডাউন ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা নিবে। উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। তবে শীতের মৌসুমে যাওয়াটাই অনেক ভালো তখন সমুদ্র অনেক শান্ত-শীতল থাকে। কক্সবাজার এবং ঢাকার কিছু বাসের কাউন্টারেও জাহাজের টিকিট কাটা যায়।

শীতের সময় পর্যটন মৌসুম হওয়ায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত কেয়ারী সিন্দবাদ, সি কুতুবদিয়া, কাজল, গ্রীন ওয়াটার বাস সহ বেশ কয়েকটি জাহাজ চলাচল করে। সকাল ১০টায় যেতে পারবেন তবে বিকাল ৩টার মধ্যেই ফিরতে হবে সেখানে থেকে।

কোথায় থাকবেন?

সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য অনেক ভালো ভালো রিসোর্ট আছে। এছাড়াও অনেক বাড়িতে থাকারও সুব্যবস্থা আছে। তবে সেন্টমার্টিন গিয়ে ১ বা ২ রাত না থাকলে আপনি তেমন কিছুই উপভোগ করতে পারবেন না। চাইলে একটা রাত সেন্টমার্টিন এই কাটিয়ে পরের দিন দুপুরে হোটেল ছেড়ে বিকালের জাহাজে করে চলে আসতে পারেন।

সেন্টমার্টিনে থাকার হোটেল ও রিসোর্ট গুলো হলো:

১. ব্লু মেরিন রিসোর্ট: এটা পশ্চিম বীজ জেটির পাশেই। রুম ভাড়া ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পযর্ন্ত। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১৭১৩-৩৯৯০০১

২. কোরাল ভিউ রিসোর্ট: জাহাজ ঘাটের বা পাশেই এই রিসোর্টটি। রুম ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পযর্ন্ত। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১৯৮০-০০৪৭৭৭

৩. অবকাশ পর্যটন লিমিডেট: পশ্চিম বিচ। রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পযর্ন্ত। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১৭১৬-৭৮৯৬৬৩৮

৪. কিংসুক ইকো রিসোর্ট: গলাচিপা মোড়। রুম ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পযর্ন্ত। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১৭৫৩-২২২২৮৬

৫. পিন্স হেভেন রিসোর্ট: এটা উত্তর বিচে অবস্থিত প্রাসাদ প্যারাডাইস এর পাশেই। রুম ভাড়া: ১৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১০১৯৯৫-৫৩৯২৪৬

৬. দি আটলান্টিক রিসোর্ট: এটি পশ্চিম বিচে অবস্থিত। রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পযর্ন্ত। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১৭০০৯৬৯২১২

৭. ড্রিম লাইট রিসোর্ট: পশ্চিম বিচের ঠিক শেষ প্রান্তে এই রিসোর্টটি। রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পযর্ন্ত। কন্ট্যাক্ট নাম্বার: ০১৮২৫৬৫৬৩২৬.

এছাড়াও আরো আছে ব্যাগস বারী রিসোর্ট পশ্চিম পাড়া,  সিটিভি রিসোর্টম পশ্চিম পাড়া, ডায়মন্ড রিসোট পশ্চিম পাড়া, বাজার এলাকায় হোটেল স্যান্ড শোর, হোটেল সী ইন, পশ্চিম বীচে হোটেল সী ফাইন্ড, ফরহাদ রিসোর্ট, ব্লু লাগুন রিসোর্ট, লাইট হাউজ রিসোর্ট, কনা পাড়ায় নীল দিগন্ত রিসোর্ট ছাড়াও আরো অনেক রিসোর্ট আছে।

ছেড়াদ্বীপ ভ্রমণ

২০০০ সালের শেষের দিকে খুজে পাওয়া দ্বীপটি সেন্টমার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জোয়ারের সময় দ্বীপের বেশীরভাগ অংশ পানির নীচে ডুবে থাকে তাই যেতে হয় ভাটার সময়। স্বচ্ছ পানি, প্রবাল এবং শৈবাল এবং কয়েকটি কেয়া বনের জন্য দ্বীপটি দেখতে অনন্য মনে হয়। ভাটার সময় চাইলে সেন্টমার্টিন থেকে সাইকেলে করেও যেতে পারেন। অথবা সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে স্পীডভোট বা ট্রলারে যেতে পারেন ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে। জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকার একটু কম বেশি।

খাবারের যায়গা

যেহেতু আবাসিক হোটেলগুলোতেই ভালো ভালো খাবারের তাই আপনাকে বাইরে খাবারের চিন্তা করতে হবে না। তবে আপনি চাইলে হোটেল গুলোতে সাজিয়ে রাখা জ্যান্ত মাছ গুলো নিজের পছন্দ মত বেছেও অর্ডার দিতে পারবেন। শীতের রাতে চাইলে বার্বিকিউ ও করতে পারবেন।

নিদের্শনা ও সতর্কতা

১. যেহেতে সেন্টমার্টিন এলাকায় পল্লি বিদ্যুৎ নেই সুতরাং আপনার মোবাইল বা ক্যামেরা চার্জের ব্যাপারে অধিক সতর্ক হতে হবে। তবে হোটেলগুলোতে জেনারেটর চালু থাকায় তাতেও চার্জ দিতে পারবেন।

২. সেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।

৩. নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে মোবাইলে কথা বলতে প্রবলেম হতে পারে তবে টেলিটক নেটওয়ার্ক সেখানে ভালো থাকে।

৪. স্থানীয় সেনাবাহিনীর আদেশ মেনে চলবেন। খুব বেশি রাত করে বাইরে থাকবেন না।

৫. কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে চাইলে ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিন ভ্রমন করতে পারেন।

৬. বিচে নামার সময় সাথে বাচ্চা থাকলে অধিক সতর্ক থাকবেন।

৭. আবহাওয়া খারাপ হলে বিচে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। মনে রাখবেন একটি দূর্ঘটনা সারা জিবনের কান্না।

৮. যেহেতু পর্যটন এলাকা তাই সব কিছু আগে থেকেই দরদাম করেই কিনা কাটা করবেন।

৯. মানুষের সমাগম বেশি দেখলে পূর্বে থেকেই শীপের টিকিট কেটে রাখবেন।

১০. পর্যটন এলাকা হওয়ায় দালালদের সমাগম বেশি থাকতে পারে তাই গাইউ এর পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন বা পুলিশ বক্স থেকেও হেল্প নিতে পারেন।

১১. একা কোন এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

১২. ঢেও এর সময় সমুদ্রে নামা থেকে বিরত থাকবেন। সাথে ছোট বাচ্চা থাকলে তাদেরকে নিয়ে সমুদ্রে নামবেন না।

১৩. অপরিচিত কারো দেওয়া কোন কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

১৪. সবসময়  পরিবেশ রক্ষার জন্য সাহায্য করবেন। স্থানীয় মানুষদের সাথে খুবই ভালো ও নম্র ব্যবহার করবেন।

১৫. স্থানীয় বয়স্কদের থেকে সেখানকার ইতিহাস জানার চেষ্টা করবেন।