October 2, 2020 By Easin 0

দালাল ও ঘুষ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরীর অভিজ্ঞতা!!!

কিছুদিন আগে পোস্ট করেছিলাম যে দালাল বা ঘুষ ছাড়াই অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স (অপেশাদার) পেয়েছি। তো জার্নিটা কেমন ছিল সেটা আজকে শেয়ার করছি। এই গাইড টি স্পেসিফিক্যালি ইকুরিয়া বিআরটিএ এর জন্য। অন্য বিআরটিএ-এর ক্ষেত্রেও কাজের পদ্ধতি অনেকটা একই রকম শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রুম নম্বর চেঞ্জ হবে।

এই গাইড আমার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা, অন্য কারো অভিজ্ঞতার সাথে পুরোপুরি মিল নাও থাকতে পারে। আবার অনিচ্ছাকৃত ভুলও থাকতে পারে, এরকম কোন ভুল চোখে পড়লে সংশোধন করে দেওয়ার অনুরোধ থাকলো।

প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবীশ লাইসেন্স করতে হবে। লার্নার নিয়ে অনলাইনে অনেক গাইড আছে তাই বিস্তারিত লিখার প্রয়োজন মনে করছি না। ইকুরিয়া বিআরটিএ তে 314 নাম্বার রুম এ লার্নার কার্ড করতে পারবেন, অথবা অনলাইনেও করা যায়। লার্নার কার্ড করার জন্য প্রয়োজন হবে মেডিকেল সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং টাকা জমাদানের রশিদ। শুধু মোটরসাইকেলের জন্য 345 টাকা এবং মোটরসাইকেল ও হালকা মোটরযান এর জন্য 518 টাকা জমা দিতে হবে।

লার্নার কার্ড এ পরীক্ষার ডেট দেওয়া থাকে অনেকদিন পর, তবে লার্নার কার্ড পাওয়ার কিছুদিন পর 313 নাম্বার রুম থেকে নিজের পছন্দমত পরীক্ষার ডেট নেওয়া যায়।

নির্ধারিত দিনে সকাল 9 টার মধ্যে পরীক্ষা দিতে চলে যাবেন। মোটামুটি সারাদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে গেলে ভালো হয়। পরীক্ষা হয় তিনটি ধাপে – লিখিত , মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট। ফিল্ড টেস্টে যদি প্রাইভেটকার দিয়ে পরীক্ষা দিতে হয় সেই ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারের খরচ বাবদ 200 টাকা দিতে হবে। পরীক্ষায় পাশ করেছেন কিনা সেটা সাথে সাথেই জানানো হবে না। সেটা জানতে পারবেন কিছুদিন পর।

কিছুদিন পর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে আপনার লার্নার কার্ড নিয়ে আসবেন। লার্নার কার্ড এর উল্টো পাশে লেখা থাকবে সবগুলোতে পাশ করেছেন নাকি কোনোটাতে ফেল করেছেন। লার্নার কার্ড পাবেন 302/304 নম্বর রুমে, অথবা তৃতীয় তলার করিডরে ঢুকতেই একটা টেবিলের উপর প্লাস্টিক বক্সে রাখা থাকে সেখানে খুঁজে দেখতে পারেন।

যদি সবগুলো পরীক্ষায় পাশ করেন, তাহলে খুঁজে দেখবেন রেজুলেশনে আপনার নাম এসেছে কিনা। রেজুলেশন দেখার জন্য 302 নাম্বার রুমে যেতে হবে। যদি রেজুলেশন প্রকাশিত না হয়ে থাকে তাহলে কিছুদিন পর গিয়ে আবার খোঁজ নিতে হবে।

রেজুলেশন এ নাম আসার পর নির্ধারিত ফরম পূরণ করে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সংযুক্ত করবেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি 2542 টাকা জমা দিয়ে এর রশিদ এবং রশিদের দুইটি ফটোকপি ওই ফরমের সাথে সংযুক্ত করবেন। আরো সংযুক্ত করবেন মূল লার্নার কার্ড ও এর দুইটি ফটোকপি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, মেডিকেল সার্টিফিকেট ইত্যাদি। তারপর ফাইলটি নিয়ে 302 নাম্বার রুমে একটা খাতায় আপনার তথ্য এন্ট্রি করাতে হবে। তারা আপনার ফাইলে একটা নাম্বার দিবে।

এরপর ওই ফাইল নিয়ে যেতে হবে 214 নাম্বার রুমে (রুম নাম্বার ভুল হতে পারে, তবে দ্বিতীয় তলায় একেবারে শেষের রুমের আগের রুম) জাকির সাহেবের রুমে। উনি অনেক সময়ে রুমে থাকেন না তাই অপেক্ষা করা লাগতে পারে। জাকির সাহেব ফাইল চেক করে সিগনেচার করে আপনাকে বায়োমেট্রিক প্রদানের ডেট জানাবেন এবং ফাইলটি নিজের কাছে রেখে দিবেন।

নির্ধারিত তারিখে 117 নম্বর রুমে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে। অনেক ভিড় থাকে তাই সকাল সকাল গেলে এবং সারাদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে গেলে ভালো হয়। 117 নম্বর রুমের সামনে সবার ফাইল নিয়ে মাইকে একের পর এক নাম ও পিতার নাম উল্লেখ করে ডাকা হয় এবং ফাইল এর একটা অংশ ছিড়ে তার সাথে একটা সিরিয়াল নাম্বার সহ টোকেন আপনাকে দেওয়া হবে। এরপর রুমের সামনে থাকা স্ক্রিনে খেয়াল করবেন যে আপনার টোকেন নাম্বার দেখানো হচ্ছে কিনা। যখন আপনার টোকেন নাম্বার দেখানো হবে তখন আপনি বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে রুমের ভেতর ঢুকবেন। বায়োমেট্রিক এর পর আপনাকে অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে। সেটা নিয়ে যেতে হবে 313 নাম্বার রুমে মোটরযান পরিদর্শক শেখ ওয়াহিদ সাহেবের কাছে (ঢাকা মেট্রো সার্কেল এর ক্ষেত্রে)। তিনি সিগনেচার করে দিলে আপনার কাজ শেষ হয়ে গেল।

এখন আপনি নিশ্চিন্তে রাস্তায় মোটরসাইকেল বা হালকা মোটরযান চালাতে পারেন।

পুরো লেখাটি পড়ার পর নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আপনাকে কমপক্ষে 7 দিন বিআরটিএ অফিসে যেতে হবে নিজে নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে। দালাল দিয়ে করলে হয়ত দু’একদিন কম যাওয়া লাগতে পারে। এছাড়া আপনার প্রয়োজন হবে অপরিসীম ধৈর্য, লেগে থাকার মানসিকতা এবং একটু সাহস। সর্বোপরি থাকতে হবে দুর্নীতির প্রতি অপরিসীম ঘৃণা।

ধন্যবাদ।

Fb . com/mmrb86